“গণতন্ত্রের অর্থ কী? এর সাথে শূরার পার্থক্য কী? এবং পার্লামেন্টে অংশগ্রহণ করার বিধান কী?”

আশ-শাইখ, আল্লামাহ নাসির বিন হামাদ আল-ফাহদ (فك الله أسره) -কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
“গণতন্ত্রের অর্থ কী? এর সাথে শূরার পার্থক্য কী? এবং পার্লামেন্টে অংশগ্রহণ করার বিধান কী?”

তিনি (আল্লাহ তাঁকে হিফাযত করুন) উত্তর দিয়েছেন:

গণতন্ত্র হলো—জনগণের শাসন। এর অর্থ হলো, হালাল-হারাম নির্ধারণ ও আইন প্রণয়নের অধিকার জনগণের নিজের হাতে। এটি মূলত প্রাচীন গ্রিসে ঈসা আলাইহিস সালাম -এর জন্মের আগেই প্রচলিত ছিল, অতঃপর ইংরেজ বিপ্লব ও তারপর ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে তা আরও বিকশিত হয়ে বর্তমানে প্রচলিত অবস্থানে পৌঁছেছে।

এটি সুস্পষ্ট কুফর। কারণ শাসন ও হুকুম দেওয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর, তাঁর কোনো শরিক নেই। আল্লাহ سبحانه وتعالى বলেন:
وَلا يُشرِكُ في حُكمِهِ أَحَدًا
“আর তিনি তাঁর হুকুমে কাউকে শরিক করেন না।” [1f4d6 সূরা কাহফ, আয়াত নং- ২৬]

“গণতন্ত্র ও শূরার মাঝে পার্থক্য — ঠিক যেমন ব্যভিচার (জিনা) আর বৈধ বিবাহ (নিকাহ)-এর মাঝে পার্থক্য; বরং এ দুয়ের পার্থক্যের চেয়েও গভীর।” এর কারণসমূহ নিম্নরূপ:

▪️প্রথমত:
শূরা কেবল ইজতিহাদী বিষয়ে হয়—যেসব বিষয়ে স্পষ্ট ও সুস্পষ্ট দলিল নেই। আর যেসব বিষয়ে শরীয়তের স্পষ্ট বিধান রয়েছে, সেখানে শূরার কোনো স্থান নেই। পক্ষান্তরে, গণতন্ত্রে ব্যতিক্রম ছাড়াই সব বিষয়ে জনগণের মতামত চলে।

▪️দ্বিতীয়ত:
শূরার জন্য নির্ধারিত ব্যক্তিরা হলেন আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ—যাঁরা ন্যায়পরায়ণতা, সৎ চরিত্র ও দ্বীনের জন্য প্রসিদ্ধ। অথচ গণতন্ত্রে যারা নির্বাচিত হয়, তারা হয় জনগণের খেয়াল-খুশি ও স্বার্থ অনুসারে—যদিও তারা সবচেয়ে পাপিষ্ঠ ব্যক্তি হয়।

▪️তৃতীয়ত:
শরীয়তের দৃষ্টিতে শূরার মতামত বাধ্যতামূলক নয়—সঠিক মতে। সুতরাং ন্যায়পরায়ণ শাসক যদি এতে ভিন্নতর কল্যাণ দেখতে পান, তাহলে তিনি শূরার মত না মানতেও পারেন। কিন্তু গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্ত বাধ্যতামূলক।

▪️চতুর্থত:
শূরার মাধ্যমে মানুষের ওপর বাধ্যতামূলক কোনো আইন জারি করা হয় না। পক্ষান্তরে, গণতন্ত্রে আইন প্রণয়ন করে তা জনগণের ওপর বাধ্যতামূলক করা হয়।
এছাড়া আরও অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ বিষয়ে কিছু ভালো গ্রন্থ রয়েছে, যেগুলোতে রেফারেন্স নেওয়া যেতে পারে।

▶️ পার্লামেন্টে প্রবেশ করার বিধান:
(ক)
এটি জনগণের শাসনের প্রতি স্বীকৃতি প্রদান স্বরূপ। কারণ, পার্লামেন্ট হলো আইন প্রণয়নের প্রতিষ্ঠান। তাতে প্রবেশ করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো শাসনকে স্বীকৃতি দেয়, যা স্পষ্ট কুফরি।

এমনকি যদি ইসলামপন্থীরা পার্লামেন্ট নিয়ন্ত্রণ করেও ইসলামি সংবিধান প্রণয়ন করে, তবুও সেটি আল্লাহর শাসন নয়; বরং তা জনগণের শাসন। কারণ, যদি সংসদের সদস্যরা পরিবর্তিত হয়, তাহলে আইনও পরিবর্তিত হবে। আর এটাই গণতন্ত্রের প্রকৃতি। পক্ষান্তরে, শরীয়াহ এমন নয়। শরীয়াহ জোরপূর্বক কার্যকর হয়—আর যে এতে আপত্তি করে, তাকে তলোয়ার দ্বারা দমন করা হয় এবং আবর্জনার স্তূপে নিক্ষেপ করা হয়। ভোটারদের সংখ্যা, সমর্থন বা বিরোধ—এসবের কোনো মূল্য নেই।

(খ)
পার্লামেন্টে প্রবেশকারীকে সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তা রক্ষার শপথ করতে হয়। অথচ এই সংবিধান কুফরির ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যাতে অগণিত ঈমান-নাশক বিষয় রয়েছে। এ ধরনের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা কুফরি—আর সেই সংবিধানের প্রতি শপথ গ্রহণ তো আরও বড় কুফরি!

(গ)
যাদের ‘ইসলামপন্থী’ বলা হয়, তারা পার্লামেন্টে পৌঁছার জন্য বহু বিষয়ে আপস করে থাকেন। অথচ তারা নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির সামান্য অংশও বাস্তবায়ন করতে পারেন না। আমাদের বর্তমান বাস্তবতা দেখলেই তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।


শাইখ আহমদ শাকির রাহিমাহুল্লাহ সূরা আলে ইমরান-এর আয়াত: وَشاوِرهُم فِي الأَمرِ অর্থাৎ “তুমি তাদের সাথে পরামর্শ কর” [৩:১৫৯]—এর তাফসীরে ‘উমদাতুত তাফসীর’-এ গণতন্ত্র ও শূরার মধ্যে তুলনা করে অত্যন্ত চমৎকার আলোচনা করেছেন এবং যারা গণতন্ত্রকে শূরার অংশ মনে করে বা নির্বাচনকে সমর্থন করে, তাদের জবাব দিয়েছেন। এটি এমন একটি আলোচনা, যা সোনার কালি দিয়ে লেখার যোগ্য। সুতরাং তা পড়ে দেখ।

[1f4d9সূত্র: ফাতাওয়া আল-হায়রিয়্যাহ (পৃষ্ঠা ২৫–২৬)]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *