بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰ الرَّحِيمِ
الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على أشرف الأنبياء والمرسلين نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين
এই রিসালাহটি কিছু মূলনীতি সম্পর্কে লিখিত যা দ্বারা একজন মুসলিম তার মহান দ্বীন [ইসলাম] এবং নতুন পৌত্তলিকতা, আধুনিক শির্ক সেক্যুলারিজম [আল ইলমানিয়্যাহ] এর মধ্যকার পার্থক্য করতে সক্ষম হবে যাতে মুসলিমরা তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে এবং এটি ও এর অনুসারী সেক্যুলারিস্টদেরকে শাসন করতে পারে।
এবং মুসলিমরা যাতে তাদের সাথে বারা’আহ করতে পারে, তাদেরকে তাকফির করতে পারে, তাদের সাথে শত্রুতা রাখতে পারে, তাদেরকে তুচ্ছ করতে পারে এবং তাদের বিরুদ্ধে জি হা দ করতে পারে হোক তারা শিক্ষাবিদ, শিক্ষাসংস্কারক, রাজনীতিবিদ, শাসক, সাংবাদিক, ধনী, প্রতিনিধি, কিংবা তাত্ত্বিক, সরকার এবং সংস্থা ইত্যাদি।
মূলনীতিগুলো হলো:
প্রথম মূলনীতি:
যে মুশরিকদের নিকটে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করা হয়েছিলো, তারাও বিশ্বাস করতো যে আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত কারো রুবুবিয়্যাহ নেই।
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
قُلْ مَنْ يَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمَآءِ وَالْاَرْضِ اَمَّنْ يَّمْلِكُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَمَنْ يُّخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُّدَبِّرُ الْاَمْرَ ؕ فَسَيَقُوْلُوْنَ اللّٰهُ ۚ فَقُلْ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
অর্থ:
বলো: [হে মুহাম্মাদ], “কে আসমান ও জমিন হতে রিযক দেয়? কিংবা কে দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তির অধিপতি? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন এবং জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন?” তখন তারা অবশ্যই বলবে, “আল্লাহ”। সুতরাং বলো, “তারপরও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?” [সুরাহ ইউনুস ১০:৩১]
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:
قُلْ لِّمَنِ الْاَرْضُ وَمَنْ فِيْهَاۤ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
سَيَقُوْلُوْنَ لِلّٰهِ ؕ قُلْ اَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ
قُلْ مَنْ رَّبُّ السَّمٰوٰتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
سَيَقُوْلُوْنَ لِلّٰهِ ؕ قُلْ اَفَلَا تَتَّقُوْنَ
قُلْ مَنْۢ بِيَدِهٖ مَلَكُوْتُ كُلِّ شَيْءٍ وَّهُوَ يُجِيْرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ
سَيَقُوْلُوْنَ لِلّٰهِ ؕ قُلْ فَاَنّٰي تُسْحَرُوْنَ
অর্থ:
বলো: তোমরা যদি জানো তবে বলো, এই যমীন এবং এতে যারা আছে তারা কার? অচিরেই তারা বলবে, “আল্লাহর”। বলো, “তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?” বলো, “কে সাত আসমানের রব্ব এবং মহা আরশের রব্ব?” তারা বলবে, “আল্লাহ।” বলো, “তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?” বলো, “তিনি কে, যার হাতে সবকিছুর কতৃত্ব, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যার উপরে কোনো আশ্রয়দাতা নেই? যদি তোমরা জানো।” তারা বলবে, “আল্লাহ।” বলো, “তবুও কিভাবে তোমরা মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছো?” [আল মু’মিনুন ২৩:৮৪-৮৯]
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:
وَمَا يُؤْمِنُ اَكْثَرُهُمْ بِاللّٰهِ اِلَّا وَهُمْ مُّشْرِكُوْنَ
অর্থ:
তাদের অধিকাংশ আল্লাহর উপর ঈমান রাখে তবে শির্ক করা অবস্থায়। [ইউসুফ ১২:১০৬]
তবে আল্লাহর রুবুবিয়্যাহর প্রতি ঈমান থাকা সত্ত্বেও তারা ইসলামে প্রবেশ করেনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, তাকফীর করেছেন।
চরমপন্থী[নাস্তিক] ব্যতীত সেক্যুলারিস্টরা ও আল্লাহর রুবুবিয়্যাহতে বিশ্বাস করে। তাদের কিছু ইবাদাত ও রয়েছে তবুও এখনো সেগুলো তাদেরকে ইসলামে প্রবেশ করায়নি। উগ্রদের [সেক্যুলারিস্ট] ক্ষেত্রে, তারা আরো তীব্র কারণ তারা বলে, “লা ইলাহ, লা রব্ব [অর্থাৎ না ইলাহ আছে, না রব্ব] এবং জীবন হলো শুধু বস্তুগত।”
দ্বিতীয় মূলনীতি:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন লোকজনের নিকটে এসেছিলেন যাদের নিকটে বিভিন্ন বিধিবিধান ছিলো যা তারা নিজেদের মধ্যকার বিতর্কে এবং অন্যসময়ে বিচারে ব্যবহার করতো। তাদের অজ্ঞ প্রথাও ছিলো যা তারা অনুসরণ করতো কিন্তু তারা না আল্লাহর আদেশকে গ্রহণ করেছে, না হিদায়াতকে।
তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছেন এবং তাদেরকে মুসলিম হিসেবে গণ্য করেননি।
তাদের বিধিবিধান থেকে কি পাওয়া যায় তা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ
অর্থ:
আর তোমরা তা থেকে আহার করো না, যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়নি এবং নিশ্চয়ই তা সীমালঙ্ঘন এবং শাইতানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্ররোচনা দেয় যাতে তারা তোমাদের সাথে বিবাদ করে। আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো, তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা মুশরিক। [আল আন’আম ০৬:১২১]
আল্লাহ তা’আলা কুরাইশ এবং তাদের অনুসারীদের সম্পর্কে বলেন:
اَمْ لَهُمْ شُرَكٰٓؤُا شَرَعُوْا لَهُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَاْذَنْۢ بِهِ اللّٰهُ
অর্থ:
তাদের জন্য কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি…। [আশ শুরা ৪২:২১]
এবং সেক্যুলারদেরও বানোয়াট আদালত প্রাদেশিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক বিধিবিধান রয়েছে। নিজেদের মধ্যকার বিচারে তারা সেগুলো ব্যবহার করে। তাদেরও কিছু জাহিলী প্রথা আছে যেগুলো তারা “সভ্য”, “আলোকিতকরণ”,” উন্নয়ন” বলে ডাকে। কিন্তু তারা আল্লাহর আদেশ ও হিদায়াত গ্রহণ করেনি। তাই তাদেরকে তাকফীর করা এবং ত্যাগ করা ব্যতীত অন্য কোনো পথের অস্তিত্ব নেই।
তৃতীয় মূলনীতি:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন লোকেদের নিকটে এসেছিলেন যারা দ্বীনকে তার চেয়ে কম করেছিলো। উদাহরণস্বরূপ, বিপদাপদে তারা শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলা ইবাদাত করতো এবং বিপদ কেটে গেলে তারা শির্কে লিপ্ত হতো।
আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে বলেন:
فَاِذَا رَكِبُوْا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللّٰهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ۚ فَلَمَّا نَجّٰهُمْ اِلَي الْبَرِّ اِذَا هُمْ يُشْرِكُوْنَ ۙ
অর্থ: তারা যখন নোযানে আরোহন করে, তখন তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে স্থলে পৌছে দেন, তখন ই তারা শির্কে লিপ্ত হয়। [আল আনকাবুত ২৯:৬৫]
এবং ঠিক এভাবেই আল্লাহর জন্য এবং অন্যান্য জিনিস তাদের মূর্তিদের জন্য উৎসর্গ করতো, যেমনটা আল্লাহ তা’আলা বলেন:
…. فَقَالُوا هَٰذَا لِلَّهِ بِزَعْمِهِمْ وَهَٰذَا لِشُرَكَائِنَا..
অর্থ:
তারা বলে, “এটি আল্লাহর জন্য এবং এটি আমাদের শরীকদের জন্য…। [আল আন’আম ০৬:১৩৬]
সেক্যুলাররা রমাদ্বানে মসজিদে, বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে এবং কিছু নির্দিষ্ট মূহুর্তে আল্লাহ তা’আলার ইবাদাত করে। এবং পাশাপাশি তারা নিজেদের [তৈরিকৃত] আইন এবং বিচ্যুত প্রথার দিকে ফিরে যায়।
চর্তুথ মূলনীতি:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের নিকটে এসেছিলেন যখন তারা বিভিন্ন বস্তুর ইবাদাত করতো। তারা প্রতিকৃতি এবং মূর্তির ইবাদাত করতো। তারা জ্বিন ও মালাইকার ইবাদাত করতো। তারা তারকাপুঞ্জ ও আগুনের ইবাদাত করতো। তারা ঈসা ইবনু মারইয়াম আলাইহিসসালাম, অন্যান্য নবী রাসুল এবং মৃত নেক ব্যক্তিদের ইবাদাত করতো।
কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাউকে পার্থক্য করেননি বরং সবাইকে কুফরের হুকুম দিয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন।
সেক্যুলারিস্টরা ঠিক এর মতো, যাদের অনেক জিনিস রয়েছে এবং তারা সেগুলোর ইবাদাত করে। তারা সেগুলোকে তাদের মা’বুদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারা আমেরিকান, ইউরোপিয়ান, রাশিয়ানদের ইবাদাত করে। তারা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের ইবাদাত করে। তারা ইবাদাত করে শাসক ও তাত্ত্বিকদের। তারা ইবাদাত করে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ এবং তাদের বর্ণের। কুফর এবং রিদ্দাহর ক্ষেত্রে তাদের [সেক্যুলারিস্ট] [আরবের পৌত্তলিক সাথে] পার্থক্য নেই।
অন্য বিষয়:
উপরের মতো ই, আমাদের সময়ে অন্য একটি বিভ্রান্ত ফির্কার আবির্ভাব হয়েছে এবং তারা সেক্যুলার এবং তাদের দালাল-দোসরদের সেতুস্বরূপ। তারা হলো মডার্নিস্ট। তাকফির এবং ঈমানের ক্ষেত্রে তারা চরমপন্থী মুরজিয়্যাহদের অন্তর্ভুক্ত। ফিকহের বিষয়ে তারা খেয়ালখুশি ও প্রবৃত্তি অনুসারী এবং অসংযমী। তারা বর্তমান বাস্তবতার নিকটে সমর্পণ করে এবং যিন্দিক হবার বিষয়ে আপস করে।
অনুবাদ : সংগৃহীত
জাযাকাল্লাহ খাইরান