‘নিকৃষ্টতম মানুষ তো তারাই, যারা কিয়ামতের সময় বেঁচে থাকবে এবং যারা কবরকে উপাসনার স্থান হিসেবে গ্রহণ করে।’

আহমদ থেকে হাসান সনদে ইবনু মাসউদ(রা.)এর এই বর্ণনা এনেছেন, যা নবি (সা.) পর্যন্ত পৌঁছায়- ‘নিকৃষ্টতম মানুষ তো তারাই, যারা কিয়ামতের সময় বেঁচে থাকবে এবং যারা কবরকে উপাসনার স্থান হিসেবে গ্রহণ করে।’ [আবু হাতিমও তার সহিহতে এই বর্ণনা এনেছেন]

রাসুলুল্লাহ(সা.) এই হাদিসে দুই শ্রেণির মানুষ সম্পর্কে বলেছেন, যাদের ওপর কিয়ামত কায়েম হবে। প্রথমত, যারা কবরের ওপর ইবাদতখানা বানায়। দ্বিতীয়ত, যারা সেসব জায়গায় ইবাদত করে। ‘কবরকে উপাসনার স্থান হিসেবে গ্রহণ করা’ কথাটির মধ্যেই এর ইঙ্গিত রয়েছে। কারণ তারা কবরবাসীদের আল্লাহর স্থানে বসায়, তাদের কাছে বরকত চায়। ফিতরাতের ওপর থাকা বিশুদ্ধ আত্মার মানুষের কাছে এসব কাজ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অন্তরে কণা পরিমাণ ঈমান থাকা কোনো ব্যক্তিও এসব কাজ মেনে নিতে পারবে না। কারণ এসব কর্মকাণ্ড কুরআন-সুন্নাহর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

উল্লিখিত হাদিস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা:

১. এই উম্মাহর কিছু সদস্য কবরপূজা করবে। রাসুল-এর এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হওয়া তাঁর একটি মুজিযা।

২. কোনো মুমিন বেঁচে থাকতে কিয়ামত আপতিত হবে না।

৩. কিয়ামতের সত্যতার প্রমাণ।

৪. কবরের ওপর ইবাদতের স্থান নির্মাণের অবৈধতা। এমনকি কবরের ওপর কিছু নির্মাণ করা না হলেও এর নিকটে সালাত আদায় করা যাবে না। কারণ ইবাদতখানা কোনো স্থাপনা হওয়া জরুরি নয়। বাইরের কোনো জায়গাও যদি এ কাজে ব্যবহৃত হয়, তাহলে সেটাও ইবাদতখানা।

তাওহিদ এবং এই অধ্যায়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা:

কবরের ওপর উপাসনালয় নির্মাণকারীদের নিকৃষ্টতম মানুষ বলা হয়েছে এই হাদিসে। কারণ এ কাজ করার মাধ্যমে মৃতের এমন প্রশংসা-কীর্তন করা হয়, যা আসলে ইবাদতের একটি রূপ। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও প্রতি ইবাদত উৎসর্গ করা শিরক। এই হাদিস প্রমাণ করে যে, কবরের ওপর ইবাদাতখানা নির্মাণ করা হারাম।

গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞাতব্য:

কবরসংক্রান্ত নিয়ম চারটি:

১. পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারত করা উত্তম কাজ। কারণ এর ফলে আখিরাতের কথা স্মরণ হয়; তবে যিয়ারতের জন্য কোনো কবরের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না।

২. কবরের ওপর স্থাপনা নির্মাণ ও আলোকসজ্জা করা একেবারেই হারাম। কারণ এটি নিশ্চিতভাবেই শিরকের দিকে নিয়ে যায়।

৩. মৃত কবরবাসীর কাছে সুপারিশ চাওয়া বা দুআ করা বড় শিরক। কারণ দুআ এক ধরনের ইবাদত। আল্লাহ ছাড়া আর কারও উদ্দেশ্যে ইবাদত করা শিরক।

৪. নারীদের জন্য কবর যিয়ারত হারাম। কারণ নবি(সা.) বলেছেন-আল্লাহ কবর যিয়ারতকারী নারীদের অভিশাপ দিয়েছেন। [আবু দাউদ]

এ ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়ার বক্তব্য:
জীবন সায়াহ্নে নবি(সা.) এই কাজ (কবরের ওপর স্থাপনা নির্মাণ) নিষিদ্ধ করেন। এমনটা যারা করে, তাদের অভিশাপ দেন। কবরের কাছে সালাত আদায়ও নিষিদ্ধ, এমনকি কবরের ওপর স্থাপনা না থাকলেও। হাদিসের উদ্দিষ্ট অর্থ এটিই। কারণ সাহাবিরা এমনিতেও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কবরের ওপর মসজিদ বানাতেন না। যে জায়গায় সালাতের নিয়ত করা হয়, সেটাই মসজিদ (সিজদার স্থান)। আসলে সালাতের জন্য ব্যবহৃত যেকোনো স্থানই মসজিদের সংজ্ঞায় পড়ে। নবি(সা.) বলেছেন: ‘সমগ্র জমিনকেই আমার জন্য পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন মসজিদ বানানো হয়েছে।’ [আবু দাউদ]

শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওয়াহাব রাহিমাহুল্লাহ
কিতাবুত তাওহীদ: ১২৫-১২৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *