আল্লাহর একটি বিধান পরিবর্তন করা, পুরো শরীয়াহ পরিবর্তন করার মতো।
শাইখ সুলাইমান আল আলওয়ান – হাফিযাহুল্লহ।
আল্লাহর আইন পরিবর্তন করা মূলত আল্লাহর শারীয়াহ পরিবর্তনের-ই প্রতিরূপ। তাই যে আল্লাহর আইন পরিবর্তন করে এবং তা বাস্তবায়ন করে তবে এটা শারিয়াহর পরিবর্তনের অনুরুপ। এবং আল্লাহর আইন প্রতিস্থাপন (তাবদীল) করাটা, আল্লহর বিধানের অবাধ্যতা বা অমান্য করার মতো নয় অপরাধ নয়। যে কেউ আল্লাহর একটি বিধান পরিবর্তন করবে, তবে তা হবে পুরো শরীয়াহ পরিবর্তন করার মতোই।
আল্লাহ ﷻ বলেনঃ
“তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কিয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আযাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফিল নন।” [সূরাঃ আল-বাকারাহ – আয়াতঃ ৮৫]
আল্লাহ ﷻ আরও বলেনঃ
“নিশ্চয় কোন মাসকে পিছিয়ে দেয়া কুফরী বৃদ্ধি করে, এর দ্বারা কাফিররা পথভ্রষ্ট হয়, তারা এটি এক বছর হালাল করে এবং আরেক বছর হারাম করে, যাতে তারা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার সংখ্যা ঠিক রাখে। ফলে আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা তারা হালাল করে। তাদের মন্দ আমলসমূহ তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। আর আল্লাহ কাফির কওমকে হিদায়াত দেন না।” [সূরাঃ আত-তাওবা – আয়াতঃ ৩৭]
যদি আল্লাহর বিধানে তাবদীল (পরিবর্তন) বৃদ্ধি পায় তখন আপত্তিসমুহ বৃদ্ধি পায় কিন্তু বিধান কার্যকর থাকে। যদি কোনো বিধান অমান্য করা হয় কোনো নির্দিষ্ট কারণে তখন সালাফগণ বলেন এটা কুফর, তবে এই কুফর একজন ব্যক্তিকে দ্বীন থেকে বের করে দেয়না। তবে যদি সে আল্লাহর এই বিধানকে পরিবর্তন করে তবে উলামাগণ সম্মতিক্রমে একমত যে, এটি এমন পর্যায়ের কুফর যা তাকে আল্লাহর দ্বীন থেকে বের করে দিবে।
এবং আমি উল্লেখ করছি, ইবনু হাজমের বর্ণনা। সে দেখলো যে, এক ব্যক্তি যে বাইবেলের (ইঞ্জিলের) বিধান দ্বারা বিচার করছে এবং আল্লাহর বিধান কে পরিত্যাগ করছে তবে সে হল নিঃসন্দেহে কাফির মুরতাদ। এবং এটা নিয়ে আলিমদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই। এখন যে বাইবেলে (যা বাতিল হয়ে গিয়েছে) থাকা আল্লাহর আইন দ্বারা বিচার করে এবং (বৈধ) কুরআনের আল্লাহর আইনকে ত্যাগ করলো, তখন তিনি সালাফদের ঐকমত অনুযায়ী তাকে মুরতাদ বিবেচিত করলেন। কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্র অনুযায়ী (যেমনঃ তাবদীলের ক্ষেত্রে)
নির্দিষ্ট আল্লাহর বিধান অমান্য করা বিশেষে যেমন, যখন একজন বিচারক এমন একটি বিচারের মুখোমুখি হন যেখানে তাকে তার পরিচিত কাছের কারও হাত কেটে ফেলার আদেশ দিতে হয়, তখন তিনি সেই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে করুণার দৃষ্টিতে দেখে তার শাস্তির নির্ধারিত হুকুমটিকে পরিত্যাগ করার অনুমতি না দিয়ে বরং, অন্য কোনো কম শাস্তির বিধান আরোপ করেন। তাহলে এক্ষেত্রে আহলুল ইলমগণ বলেন, এই কাজটি কুফর। তবে এটি তাকে দ্বীন থেকে বের করে দেয়না। কারণ বিচারক এমন কিছু করেনি যা নাওয়াকিদের (ঈমান ভঙ্গের) কারণসমূহের অন্তর্ভুক্ত।
এবং আমি জানিনা এমন কোনো আলিম এটা বলেছেন যে, এটা কুফর। যা ব্যক্তিকে এক্ষেত্রে দ্বীন থেকে বের করে দেয়।
কিন্তু যখন তাবদীল বা পরিবর্তনের বিষয় আসে, তখন সে এটি পরিবর্তন করে মানুষকে তা অনুসরণ করতে বলে আল্লাহর আইনের বিপরীতে, সে আল্লাহর ঐ বিধান উঠিয়ে অন্য আরেকটি বিধান বাস্তবায়িত করে এবং আল্লাহর বিধানকে অন্যান্য বিধান দ্বারা প্রতিস্থাপন করে। অন্যান্য বিধান দ্বারা পরিচালনা করে। একদিক আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করে অপর দিকে আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে অন্যান্য আইন প্রণয়ন করে। (যেমনঃ মৃত্যুদণ্ড বা হাত কাটা সংক্রান্ত আল্লাহর বিধানের ক্ষেত্রে)
আল্লাহ ﷻ বলেনঃ
“আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আযাবস্বরূপ এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরাঃ আল-মায়েদা – আয়াতঃ ৩৮]
যখন এই আইনগুলোর ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহর আইন প্রয়োগ বাতিল করেন এবং বলেন ফাঁসির বদলে তাদের জেলে পাঠানো যাক এবং অঙ্গচ্ছেদের বদলে তাদের জরিমানা করা যাক, তখন এই ব্যক্তি আল্লাহর আইন পরিবর্তন করেছেন এবং মানুষের জন্য অন্য আইন নিয়ে এসেছেন এবং তিনি এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর বিধান বাতিল করেছেন এবং তিনি মানুষকে বলেন যে, এটি হলো নতুন আইন যা তোমরা এখন থেকে অনুসরণ করবে। তখন এই ব্যক্তি মুশরিক। কেউ যদি আল্লাহর নির্ধারিত আইন পরিবর্তন করে বা নতুন আইন সৃষ্টি করে, তবে সে কুফর করে, এবং এব্যাপারে উলামায়ে কেরামগণ একমত।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “যদি কেউ আইন প্রণয়ন করে, তাহলে সে আলিমদের মতে কাফির ও মুরতাদ।”
ইবনু হাজম (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “সে মুশরিক হয়ে যায়, এব্যাপারে উলামাগণের মাঝে কোনো সন্দেহ নেই, সকলেই একমত।”
ইসহাক ইবনু রাহওয়াইহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “যে কেউ যে কোন কিছুকে প্রত্যাখ্যান করে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন বা যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিয়ে এসেছেন, তাহলে সে একজন কাফির।”
☝️