গণতন্ত্র একটি নব উদ্ভাবিত দ্বীন

গণতন্ত্র একটি নব উদ্ভাবিত দ্বীন, যেখানে এর উদ্ভাবকরা হল মিথ্যা উপাস্য এবং অনুসারীরা হলো তাদের দাস।

আবু মুহাম্মদ আসিম আল মাকদিসী -হাফিযাহুল্লাহ
প্রথমত: আমাদের গণতন্ত্র (Democracy) শব্দটির উৎস সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আমাদের সবার জানা থাকা উচিত যে এটা আরবী শব্দ নয়, এটি একটি গ্রীক শব্দ। দু’টি শব্দের সমন্বয়ে তা গঠিত হয়েছে: ‘গণ’ (Demos) অর্থ জনগণ এবং ‘তন্ত্র’ (Cracy) অর্থ হলো বিধান, কর্তৃত্ব বা আইন। গণতন্ত্রের শাব্দিক অর্থ হলো মানুষের দেয়া বিধান, মানুষের কর্তৃত্ব, বা মানুয়ের তৈরী আইন। গণতন্ত্রের সমর্থকদের মতে, এটিই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং এ কারণেই তারা এ ব্যবস্থার প্রশংসা করে এবং সমাজ ব্যবস্থা হিসেবে গণতন্ত্রকে অনেক উচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়। একই সাথে, তা কুফর, শিরক, এবং মিথ্যা মতবাদের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক; কারণ আপনি জানেন, যে প্রধান কারণে আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে এবং যে কারণে কিতাবসমূহ নাযিল করা হয়েছে এবং নবী-রাসূলগণ প্রেরণ করা হয়েছে, আর যে ঘোষণা দেয়া আমাদের প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক, তা হলো আল্লাহর একাত্ববাদের ঘোষণা। প্রতিটি ইবাদত একমাত্র তাঁরই দিকে নিবদ্ধ করা এবং তাঁকে ছাড়া অন্য সকল কিছুর ইবাদত করা হতে দূরে থাকা। বিধানের অর্থাৎ আইন, বিচার বা শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আনুগত্য যা এক ধরনের ইবাদত তা একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য; আর এই আনুগত্য যদি অন্য কাউকে করা হয় তবে মানুষ মুশরিক হয়ে যাবে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
গণতন্ত্র বলে থাকে আইন জনগণের দ্বারা বা অধিকাংশ লোকের দ্বারা প্রবর্তিত হয় যা গণতন্ত্র পন্থীদের সবচেয়ে বড় দাবী। কিন্তু বর্তমানে আইন প্রবর্তনের অধিকার চলে গেছে বিচারকদের হাতে বা বড় নেতা, বড় ব্যবসায়ী ও ধনীদের হাতে, যারা তাদের টাকা ও মিডিয়ার মাধ্যমে সংসদে স্থান করে নেয় এবং তাদের প্রধান উপাস্যরা (রাজা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ইত্যাদি) ক্ষমতা রাখে যে কোন সময় ও যে কোন ভাবে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার।
সুতরাং, বহু ঈশ্বরবাদের (polytheism) এক পাশে হচ্ছে গণতন্ত্র এবং অন্য পাশে হলো আল্লাহর সাথে কুফরী করা যা অনেক কারণেই ইসলামের একত্ববাদের, নবী ও রাসূলদের দ্বীনের বিরোধী। আমরা এ গুলোর কিছু এখানে উলেখ করবো।
প্রথমতঃ এখানে আইন হচ্ছে মানুষের বা ত্বাগুতের, আল্লাহর আইন নয়। আল্লাহ্ তাঁর রাসূলকে (সা.) হুকুম দিয়েছেন আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুসারে বিচার ফয়সালা করার জন্যে এবং মানুষের ইচ্ছা দ্বারা প্রভাবিত না হতে এবং আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তা থেকে সরে যেতে যেন প্রলুব্ধ না হন। আল্লাহ্ বলছেন:
وَاَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ وَلَا تَتَّبِعْ اَهْوَآءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ اَنْ يَّفْتِنُوْكَ عَنْۢ بَعْضِ مَاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ اِلَيْكَ
“কিতাব অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তদানুয়ায়ী তাদের বিচার নিষ্পত্তি কর, তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ না কর এবং তাদের সম্বন্ধে সর্তক হও যাতে আল্লাহ্ যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছেন তারা তার কিছু হতে তোমাকে বিচ্যুত না করে” [সূরা মায়িদা ৫:৪৯]। এটাই ইসলামের একত্ববাদ।
অথচ গণতন্ত্রে, যা একটি শিরকী জীবন ব্যবস্থা, তার দাসেরা বলে, “তাদের মাঝে বিচার কর যা মানুষের দ্বারা গ্রহীত হয়েছে এবং তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর এবং ওদের ব্যাপারে সতর্ক হও যেন ওরা তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে না করে ওদের ইচ্ছা ও বিধানের দিকে।” তারা এ কথাটি বলে থাকে এবং গণতন্ত্রও তাই বলে থাকে। তারা নিজেরাই বিধান দিয়ে থাকে। এটি একটি স্পষ্ট কুফরী, বহু ঈশ্বরবাদ তথা শিরক, যদি তারা বিধান দেয়ার ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে।
তারা তাদের বক্তব্যকে আকর্ষণীয় করে সাজায়, তাদের কার্যকলাপ আরও নিকৃষ্ট; যদি কেউ তাদের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বা তাদের নীতির সাথে এক মত না পোষণ করে বা বিরোধিতা করে তখন তারা বলে, “তাদের মাঝে ফয়সালা কর যেভাবে সংবিধান এবং তাদের বিশেষ শ্রেণীর লোকেরা চায় এবং ঐসব লোকেদের ঐক্যমত ছাড়া কোন বিধান, কোন আইন ব্যবহার করা যাবে না।”
দ্বিতীয়ত: তাদের সংবিধানের মতে, আইন বা বিধান দিবে সংসদে নির্বাচিত কতিপয় মানুষ বা ত্ব/গুতেরা যারা নিজেদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ করছে। এটা তাদের সংবিধানের কথা, যেই সংবিধানকে তারা আল-কুর’আন থেকেও পবিত্র বলে মনে করে থাকে।”[‘বাংলাদেশের সংবিধানের মূল ধারা নং৭(২):
৭(২) জনগণের অভিপ্রায়ে পরম অভিব্যক্তিকরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য পূর্ণ হয় তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি আসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হইবে।
একই কথা বলা হয়েছে ৩য় ভাগের ২৬ ধারায়। এবং সংবিধানের ৫ম ভাগের সংসদ নামক পরিচ্ছেদে সংসদ-প্রতিষ্ঠা নামক ধারায় বলা হয়েছে:
৭(১) ‘জাতীয় সংসদ’ নামে বাংলাদেশের একটি সংসদ থাকিবে এবং এই সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সংসদের উপর ন্যস্ত হইবে।]
তারা এইসব মানব-রচিত সংবিধান বা আইনকে আল্লাহ্ তা’আলার নাযিলকৃত আল-কুর’আনের দেয়া বিধান বা আইনের উপর প্রাধান্য দেয়। সে জন্যে গণতন্ত্রে কোন শাসন ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হবে না যদি তা তাদের সংবিধান দ্বারা অনুমোদিত না হয় কারণ তাদের আইনের উৎস হচ্ছে এই সংবিধান। গণতন্ত্রে আল- কুর’আনের আয়াত, রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ্ ও তাঁর হাদীসের কোন দাম নেই। এটা তাদের জন্যে সম্ভব নয় যে, আল- কুর’আন ও রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ্ অনুসারে কোন আইন প্রণয়ন করবে যদি তা তাদের ‘পবিত্র’ সংবিধনের সাথে না মিলে। আপনি যদি বিশ্বাস না করেন তাহলে তাদের আইন বিশেষজ্ঞের কাছে জিজ্ঞাস করতে পারেন। আল্লাহ্ বলেছেনঃ
فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَي اللّٰهِ وَالرَّسُوْلِ اِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّاَحْسَنُ تَاْوِيْلًا
“… অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোন ব্যাপারে মতবৈষম্যের সৃষ্টি হয় তবে সেটি আল্লাহ্ ও রাসূল (সা.)-এর দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা প্রকৃতই আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার হয়ে থাক। এটি সঠিক কর্মনীতি ও পরিণতির দিক দিয়ে এটিই উত্তম।” [সূরা আন্-নিসা ৪:৫৯]
কিন্তু গণতন্ত্র বলেঃ “যদি তোমাদের মাঝে কোন বিষয়ে মত বিরোধ দেখা দেয় তবে তা সংবিধান, সংসদ, রাষ্ট্রপ্রধান বা তাদের আইনের কাছে নিয়ে যাও।”
আল্লাহ্ বলেছেন,
اُفٍّ لَّكُمْ وَلِمَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ ؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ
“অভিশাপ তোমাদের উপর এবং তাদের উপর যাদের তোমরা আল্লাহর পাশাপাশি ইবাদত কর। তারপরও কি তোমরা বুঝবে না?” [সূরা আম্বিয়া ২১ঃ ৬৭]
[ আল্লাহ্ আল-কুর’আনে বলছেন যে ইব্রাহীম (আঃ) এই কথাটি তাঁর কওমের (জাতি) কাছে বলেছিলেন তাদের দেব-দেবীর অক্ষমতা প্রকাশ করার পর।]
জনসাধারণ যদি আল্লাহ্ শরীয়ত গণতন্ত্রের মাধ্যমে বা ক্ষমতাসীন মুশরিকদের আইনসভার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে কখনও তারা তা করতে সক্ষম হবে না যদি ত্ব\গুতেরা (রাজা, প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট) অনুমতি না দেয়, যদি তাদের সংবিধান অনুমোদন না দেয় কারণ এটিই গণতন্ত্রের ‘পবিত্র’ গ্রন্থ। অথবা বলা যায় যে, এটা গণতন্ত্রের বাইবেল বা তাওরাত যা তারা নিজেদের খারাপ ইচ্ছা ও খেয়াল-খুশি দ্বারা কুলষিত করেছে।
তৃতীয়ত: গণতন্ত্র হচ্ছে সেকিউলারিজম”**-এর নিকৃষ্ট ফল এবং এর অবৈধ সন্তান, কারণ সেকিউলারিজম হচ্ছে একটি ভ্রান্ত মতবাদ যার উদ্দেশ্য হচ্ছে শাসন-কতৃত্ব থেকে ধর্মকে আলাদা করা। গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণ বা ত্ব/গুতের শাসন; আল্লাহর শাসন নয় কারণ গণতন্ত্রে আল্লাহর আদেশ কোন বিবেচ্য বিষয়ই নয়, যতক্ষণ না তা তাদের সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। এভাবে অধিকাংশ জনগণ যা চায়, অধিকন্তু তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই সমস্ত ত্বাগুতেরা যা চায় তা তাদের সংবিধানের অংশ হয়ে যায়।(” **সেকিউলারিজম: সমাজ ও রাজনীতি ধর্মের থেকে আলাদা করা হয় যে মতবাদে তাই সেক্যুলারিজম অর্থাৎ সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থার রাজনীতি চলবে তার নিজস্ব নীতি অনুসারে, এতে ধর্মকে আনা যাবে না বা তা হবে ধর্মীয় অনুসাশন মুক্ত।)
সুতরাং সমস্ত জনগণ যদি একসাথে হয়ে ত্ব/গুতদের ও গণতন্ত্রের উপাস্যদের বলেঃ “আমরা আল্লাহর শাসন চাই, আমরা কোন মানুষকে, সাংসদদেরকে এবং শাসকদেরকে বিধানদাতা হতে দিব না। আমরা মুরতাদ, ব্যভিচারী, চোর, মদ্যপায়ীদের ক্ষেত্রে আল্লাহর শাস্তি জারি করতে চাই। আমরা মহিলাদেরকে হিজাব পরতে বাধ্য করতে চাই। আমরা পুরুষ ও মহিলাদেরকে তাদের সতীত্ব রক্ষা করতে বাধ্য করতে চাই। আমরা অনৈতিক অশ্লীলতা, ব্যভিচার, নীতি বহির্ভূত কাজ, সমকামিতা এবং এই ধরনের যত খারাপ কাজ আছে তা প্রতিরোধ করতে চাই।” সে মুহূর্তে, তাদের উপাস্যরা বলবে: “এটা গণতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থার ও ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা নীতির বিরোধী!”
সুতরাং গণতন্ত্রের স্বাধীনতা হচ্ছে: আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ও বিধান থেকে মুক্ত হওয়া এবং তাঁর বেধে দেয়া সীমা লংঘন করা।
নৈতিক বিধানগুলো বিধিবদ্ধ করা হয় না এবং প্রত্যেকে যারা তাদের সাথে একমত হবে না অথবা তাদের দেয়া সীমা রেখা মানবে না, তাহলে তাদের শাস্তি দেয়া হবে।(সুতরাং, আপনি যদি আপোষহীনভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চান, তবে আপনি হবেন একজন দেশদ্রোহী ও গণতন্ত্রের শত্রু।)
একারণেই, গণতন্ত্র এমন একটা দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা যা আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা থেকে আলাদা। এটা হচ্ছে ত্ব/গুতের শাসন, আল্লাহর শাসন নয়। এটা হচ্ছে অন্য উপাস্যদের আইন; আল্লাহর আইন নয়, যিনি একক এবং সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক। যে কেউ গণতন্ত্রকে গ্রহণ করল, সে এমন আইনের শাসন মেনে নিলো যা মানব-রচিত সংবিধানের অনুসারে লেখা এবং সে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ দেয়া শাসন ব্যবস্থার চেয়ে ঐ শাসন ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিলো।
সুতরাং, কোন ব্যক্তি আইন প্রণয়ন করুক বা নাই করুক, বহুঈশ্বরবাদীয় নির্বাচনে জয়ী হোক বা নাই হোক, কেউ যদি মুশরিকদের সাথে গণতন্ত্রের নীতির বিষয়ে, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে, বিচার ফয়সালা করার ক্ষেত্রে তাদের সাথে একমত হয় এবং আল্লাহ্ কিতাব, বিধান ও কর্তৃত্বের চেয়ে তাদের কিতাব, বিধান ও কর্তৃত্বকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তাহলে সে নিজে একজন অবিশ্বাসী রূপে পরিগণিত হবে। একারণেই, গণতন্ত্র অবশ্যই একটি স্পষ্ট ভ্রান্ত পথ; একটি শিরকি ব্যবস্থা।
গণতন্ত্রে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে এবং প্রতিটি দল বা গোত্র বিভিন্ন উপাস্য থেকে তাদের উপাস্যকে নির্বাচন করে থাকে যে তার খেয়াল ও ইচ্ছা মতো বিধান দিবে কিন্তু তা হতে হবে সংবিধানের নীতি মোতাবেক। কেউ কেউ তাদের উপাস্যদের (বিধান দাতা) নির্বাচিত করে নিজস্ব মতবাদ বা চিন্তাধারা মোতাবেক; সুতরাং প্রত্যেক দলের নিজস্ব উপাস্য থাকে কখনও গোত্রভিত্তিকভাবে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়, যেন প্রত্যেক গোত্রের একেকজন উপাস্য থাকে। কেউ আবার দাবি করে তারা ‘ধার্মিক উপাস্য’ নির্বাচিত করে, যার দাড়ি আছে অথবা দাড়ি বিহীন উপাস্য বা ইলাহ এবং এমন আরও অনেক রকম। (দুঃখজনক ব্যাপার, এই বিষয়টি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, কুয়েত, জর্ডান, সৌদি আরব, মিশর,তুর্কি এমন অনেক দেশে বিদ্যমান।)
আল্লাহ্ বলেন:
اَمْ لَهُمْ شُرَكٰٓؤُا شَرَعُوْا لَهُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَاْذَنْۢ بِهِ اللّٰهُ ؕ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ؕ وَاِنَّ الظّٰلِمِيْنَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
“তাদের কি এমন কতগুলো ইলাহ (উপাস্য) আছে যারা তাদের জন্য বিধান দিয়েছে এমন দ্বীনের, যার অনুমতি আল্লাহ্ দেন নাই? ফয়সালার (বিচার দিবসের) ঘোষণা না থাকলে তাদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়ে যেত। নিশ্চয়ই যালিমদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।” [সূরা আস-শূরা ৪২:২১]
এই এম. পি.রা বাস্তবেই অংকিত, খোদাই করে দাঁড় করানো মূর্তিদের মত উপাস্য যাদেরকে তাদের উপাসনালয়ে (সংসদ ভবন বা দলীয় অফিসে) স্থাপন করা হয়। এই সব প্রতিনিধিরা বা সাংসদরা গণতন্ত্র এবং সংসদীয় শাসন ব্যবস্থাকে তাদের দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা রূপে গ্রহণ করে থাকে। তারা সংবিধান অনুসারে দেশ শাসন করে থাকে, আইন দেয় এবং এর পূর্বে তারা তাদের সবচেয়ে বড় উপাস্য, সবচেয়ে বড় মুশরিক থেকে অনুমতি নিয়ে থাকে, যে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় তা গ্রহণ বা বর্জনের। এই সবচেয়ে বড় উপাস্য হলো রাজপুত্র বা রাজা বা দেশের রাষ্ট্রপতি।
এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের বাস্তবতা এবং এই জীবন ব্যবস্থার প্রকৃত রূপ। এটাই হচ্ছে মুশরিকদের দ্বীন, আল্লাহর দেয়া দ্বীন নয়, আল্লাহর রাসূলের (সা.) দ্বীন নয়। এটাই হচ্ছে বহু উপাস্যদের দ্বীন, এক আল্লাহর দ্বীন নয়।
আল্লাহ্ বলেন:
يٰصَاحِبَيِ السِّجْنِ ءَاَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُوْنَ خَيْرٌ اَمِ اللّٰهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ ؕ
مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اَسْمَآءً سَمَّيْتُمُوْهَاۤ اَنْتُمْ وَاٰبَآؤُكُمْ مَّاۤ اَنْزَلَ اللّٰهُ بِهَا مِنْ سُلْطٰنٍ
“… ভিন্ন ভিন্ন বহু উপাস্য শ্রেয়, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? তাঁকে ছেড়ে তোমরা কেবল কতকগুলি নামের ইবাদত কর, যেই নামগুলি তোমাদের পিতৃপুরুষ ও তোমরা রেখেছ, এইগুলির কোন প্রমাণ আল্লাহ্ পাঠান নাই।…” [সূরা ইউসুফ ১২: ৩৯-৪০]
তিনি আরো বলেন:
An-Naml 27:63
ءَاِلٰهٌ مَّعَ اللّٰهِ ؕ تَعٰلَي اللّٰهُ عَمَّا يُشْرِكُوْنَ
“… আল্লাহর সহিত অন্য ইলাহ আছে কি? ওরা যাকে শরীক করে আল্লাহ্ তা হতে বহু ঊর্ধ্বে।” [সূরা আন্ নামল ২৭ঃ ৬৩]
কাজেই আপনাকে বেছে নিতে হবে ‘আল্লাহ্ প্রদত্ত দ্বীন, তাঁর বিশুদ্ধ বিধান, তাঁর দীপ্তিময় আলো ও তাঁর সীরাতুল মুসতাকিম (সরল পথ)’ অথবা ‘গণতন্ত্রের দ্বীন এবং এর বহু ঈশ্বরবাদ, কুফরী, এবং এর ভ্রান্ত পথের’ মধ্যে যেকোন একটিকে। আপনাকে অবশ্যই এক আল্লাহর বিধান অথবা মানব রচিত বিধানের মধ্যে থেকে যে কোন একটিকে গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ্ বলেন:
قَدْ تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰي لَا انْفِصَامَ لَهَا
“… সত্য পথ ভ্রান্ত পথ হতে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। যে ত্ব/গুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহতে ঈমান আনবে সে এমন এক মযবুত হাতল ধরবে যা কখনও ভাঙ্গবে না।” [সূরা বাকারা ২ঃ ২৫৬]
আরও বলেনঃ
Al-Kahf 18:29
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ ۟ فَمَنْ شَآءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَآءَ فَلْيَكْفُرْ ۙ اِنَّاۤ اَعْتَدْنَا لِلظّٰلِمِيْنَ نَارًا
“বল, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক আর যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক।’ আমি যালিমদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি…।” [সূরা কাহফ ১৮: ২৯]
তিনি আরও বলেন,
اَفَغَيْرَ دِيْنِ اللّٰهِ يَبْغُوْنَ وَلَهٗۤ اَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّاِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ
قُلْ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلَيْنَا وَمَاۤ اُنْزِلَ عَلٰۤي اِبْرٰهِيْمَ وَاِسْمٰعِيْلَ وَاِسْحٰقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْاَسْبَاطِ وَمَاۤ اُوْتِيَ مُوْسٰي وَعِيْسٰي وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ ۪ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ اَحَدٍ مِّنْهُمْ ۫ وَنَحْنُ لَهٗ مُسْلِمُوْنَ
وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْاِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ ۚ وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِيْنَ
“তারা কি চায় আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন? যখন আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে সমস্তই স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে। আর তাঁর দিকেই তারা প্রত্যাবর্তন করবে। বল, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরগণের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল এবং যা মুসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে প্রদান করা হয়েছে তাতে ঈমান এনেছি। আমরা তাঁদের মধ্যে কোন তারতম্য করি না এবং আমরা তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণকারী। কেউ যদি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চায় তাহলে তা কখনও কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আলে ইমরান ৩ : ৮৩-৮৫]
1f4d6 গণতন্ত্রঃ একটি জীবন ব্যবস্থা (দ্বীন)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *