গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দ্বীন কায়েম

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দ্বীন কায়েম : দাবি ও বাস্তবতা
বাংলাদেশে যারা দ্বীন কায়েমের অভিপ্রায়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় রয়েছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দ্বীন কায়েমের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাদের ইখলাস নিয়ে আপত্তি না থাকলেও কর্মপদ্ধতি নিয়ে সঙ্গত কারণেই আপত্তি তুলতে হচ্ছে। তাদের কর্মপদ্ধতি যে-শতভাগ ভুল এবং শরীআহ ও বাস্তবতা বিবর্জিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তো এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত যে, গণতন্ত্র সুস্পষ্ট কুফর ও শিরক। গণতন্ত্রকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা, গণতন্ত্রকে সমর্থন করা, দ্বীন কায়েমের উদ্দেশ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা কুফরি ও শিরকি। এই প্রবন্ধে বাস্তবতার নিরিখেও এটা প্রমাণ করবো যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দ্বীন কায়েমের জন্য আমরণ চেষ্টা করা যেতে পারে, তবে তাতে এক ইঞ্চি জমিনেও দ্বীন কায়েম হবে না। বরঞ্চ এতে আরও দ্বীনের অঙ্গহানি হবে। এবং ইতিমধ্যেই দ্বীনের যে-অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা বিচক্ষণ, বিবেকবান ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিদের কারও কাছেই অজানা নয়। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ দ্বীন বিমুখ হবে, খিলাফাহ বিমুখ হবে। সর্বোপরি ঈমানহারা হয়ে জাহান্নামে যাবে, নায়ূযুবিল্লাহ।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। যার‌ নিজস্ব গঠনতন্ত্র ও সংবিধান রয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধান চারটি মৌলিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা।‌ এই চারটি ভিত্তি আবার একেকটা স্বতন্ত্র মতবাদও বটে। আর এই চারটি মৌলিক ভিত্তি বা মতবাদই বাংলাদেশ‌ সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য মৌলিক অংশ।‌ এই চারটি ভিত্তি বা মতবাদকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সংবিধানের কল্পনাও করা যায় না। এই মৌলিক চারটি বিষয়কে কেউ কখনও পরিবর্তনও করতে পারবে না। সংবিধানের ১৪২ নং ধারায় প্রয়োজনমত সংবিধানে সংশোধনী আনার কথা উল্লেখ থাকলেও এই চারটি মৌলিক ভিত্তিতে কোনোরূপ পরিবর্তন আনা যাবে না বলা হয়েছে।
পক্ষান্তরে ইসলাম এই চারটি মতবাদকে কোনও অবস্থাতেই সমর্থন ও স্বীকার করে না। বরং তা ইসলামি শরীআহর সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা–প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা জীবনব্যবস্থা। এবং এই প্রতিটি মতবাদ কুফর ও শিরকে ভরপুর। কোনও মুমিন ইসলাম মানবে আবার উক্ত কুফর ও শিরকি মতবাদকেও মানবে, এটা কখনোই সম্ভব নয়। কারণ, আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবন বিধান হলো ইসলাম। ইসলাম ছাড়া আর কোনও জীবনব্যবস্থা ও মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাজ্য। কেউ যদি উপরিউক্ত কোনও একটি মতবাদ গ্রহণ করে, তাহলে এটাই হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামে যাওয়ার কারণ, নায়ূযুবিল্লাহ।
এখন যে বা যারা মনে করেন যে, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে ফেলবো তারা কোনোদিন ‘বাংলাদেশ সংবিধান’ পড়েছেন কি-না তা আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন। আর পড়লেও বুঝেছেন কি-না এই প্রশ্নও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, কেউ যদি ‘বাংলাদেশ সংবিধান’ বুঝেশুনে পড়ে থাকে, তাহলে সে কখনোই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলাম কায়েমের কথা বলবে না। আর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দ্বীন কায়েমের পথে হাঁটার মতো বোকামি তো করবেই না। কেউ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং ক্ষমতায় গিয়ে পুরো সংবিধান বাতিল করে দিবে–এটা তো কাঁচা মাটির তৈরি খেলনার পুতুল নয় যে, যার যখন যেভাবে মনে চাইবে ভেঙে নতুন অবয়বে ঢেলে সাজাবে।
সংবিধানের ৭ [ক] এর ক. খ. ও গ অনুচ্ছেদ‌ এবং ৭ [খ] এ বলা হয়েছে যে, কোনও ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনও অসাংবিধানিক পন্থায়–এই সংবিধান বা ইহার কোনও অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে, কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে; কিংবা এই সংবিধান বা ইহার কোনও বিধানের প্রতি নাগিরকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।
সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনও পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।
এমতাবস্থায় কেউ যদি ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে প্রথমেই তাকে সংবিধানের প্রস্তাবনার মৌলিক চারটি বিষয়কে বাতিল করতে হবে, যা সংবিধানের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক ও সংবিধান বিরোধী কর্ম, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। আবার এই চারটি মৌলিক কুফরি মতবাদকে আপন অবস্থায় রেখে ইসলাম কায়েম করাও সম্ভব নয়। কারণ ইসলাম আর কুফর কখনোই একসাথে সহাবস্থান করতে পারে না। একটার উপস্থিতিতে আরেকটা বাকি থাকে না, থাকতে পারে না। এই ক্ষেত্রে ইসলামপন্থী গণতান্ত্রিকদের এক্সপ্রেশনটা কেমন হবে? এটাই মাঝেমধ্যে চিন্তা করি। গণতান্ত্রিকরা তো আবার সশস্ত্র বিপ্লবেও বিশ্বাসী নন। জিহাদ-কিতালে তো তাদের মারাত্মক এলার্জি রয়েছে। অথচ দিনশেষে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে তাদেরও সে পথেই হাঁটতে হবে। অন্যথায় জীবনভর ইসলাম প্রতিষ্ঠার জয়গান গেয়ে যাবে, কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না।
আরও একটি বিষয় খুলাসা করি। এ দেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি আসলে কী হবে? গণতান্ত্রিকরা যদি মনে করে যে, সাংবিধানিক উপায়ে ইসলামি শাসনতন্ত্র হবে, তাহলে এটাও তাদের ভুল ধারণা ও আকাশকুসুম কল্পনা। কারণ, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানের ১১ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, প্রজাতন্ত্র হইবে একটা গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে। মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে। এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।
১২ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য [ক] সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, [খ] রাষ্ট্র কর্তৃক কোনও ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, [গ] রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার, [ঘ] কোনও বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে।
এই ধারাটা বাহ্যিকভাবে অনেকের কাছে আপত্তিকর মনে নাও হতে পারে, তবে শরীআহর আলোকে বিবেচনা করলে যথেষ্ট সমস্যা বের হয়ে আসবে। তা ছাড়া শরীআহ অনুযায়ী রাষ্ট্র শাসিত হলে এই ধারার ধারক ও বাহকরা আপত্তি তুলবেই। কারণ, ইসলামে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কিছুই নেই। কোনও ধর্ম রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় উন্নীত হবে না–এটাও ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম সমুন্নত হবে এবং পৃথিবী ব্যাপী বিজয়ী থাকবে। ইসলামের ওপর অন্য কোনও ধর্ম ও মতবাদ কখনোই বিজয়ী হবে না, কর্তৃত্বও করতে পারবে না।
বাংলাদেশ সংবিধানের সকল ধারা উপধারা মেনে নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দ্বীন কায়েম কখনোই সম্ভব নয়। এটা শতভাগ নিশ্চিত বিষয়। তবুও যদি কেউ ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে তাকে অপরিহার্যভাবেই সংবিধান লঙ্ঘন ও অস্বীকার করতে হবে, যার অনিবার্য পরিণতি হলো যুদ্ধ।‌ এবং প্রকারান্তরে গৃহযুদ্ধ। মোটকথা ইসলাম চাইলে আপনাকে যুদ্ধে লিপ্ত হতেই হবে। আর যদি যুদ্ধ করেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হয়, সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমেই বিজয় আনতে হয়, তাহলে কুফরি তন্ত্র-মন্ত্রের দ্বারস্থ হয়ে নিজেদের ঈমান খোয়ানোর কী দরকার? শরীআহর শত শত বিধান লঙ্ঘন করতে হবে কেন? লাঞ্ছিত হতে হবে কেন? এরচেয়ে বরং আল্লাহর কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ এবং সালাফদের নির্দেশিত মানহাজে আগানোই তো অনেক ভালো। বস্তুত এভাবে আগানোই অপরিহার্য। এতে বিজয়ও আসবে ঈমানও বাঁচবে। দুনিয়া ও আখিরাতে মহা প্রতিদানও পাওয়া যাবে।
এখানে আরেকটি বিষয় বলে রাখা ভালো যে, যারা বলেন আমরা কুফরি ও শিরকি গণতন্ত্র মানি না; আমরা কেবল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটা অংশ ‘নির্বাচন’কে মানি। এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। আর এটি দ্বীন কায়েমের একটি প্রসেস-প্রক্রিয়া মাত্র। তাদের কাছে আমাদের একটি প্রশ্ন হলো—এক লোক সনাতন ধর্মকে মানে না। বরং তাকে অস্বীকার করে। কিন্তু সে শুধু সনাতন ধর্মের একটা উৎসব দূর্গা পূজায় অংশগ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে সে কাফির ও মুশরিক হবে কিনা? তার ঈমান নষ্ট হবে কিনা? হলে কেন হবে?
তা ছাড়া বাংলাদেশে যতগুলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে এবং যারা তার সাথে সম্পৃক্ত আছে, তারা বাংলাদেশ সংবিধান ও গণতন্ত্রের সকল কুফর ও শিরিককে স্বীকার করে, সেগুলোর প্রতি পূর্ণ আস্থা, সমর্থন ও আনুগত্য প্রকাশ করেই রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছে। আর এসব স্বীকার করা এবং মেনে নেওয়ার কারণেই তারা বৈধ রাজনৈতিক দল‌ ও বৈধভাবে রাজনীতি করতে পারছেন, অন্যথায় তাদের নিষিদ্ধ করা হতো। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এমনকি ক্রাক ডাউনও চালানো হতো। আমার এই দাবির সমর্থনে একটা বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরছি। চরমোনাইয়ের রাজনৈতিক দলের নাম ছিল “ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন”। এখন তাদের আর সেই নাম নেই। তাদের বর্তমান নাম হলো “ইসা ছাত্র আন্দোলন”। এই নাম পরিবর্তনের কারণ কি? এর কারণ হলো বাংলাদেশ সংবিধান ও গণতন্ত্রের সাথে “ইসলামী শাসনতন্ত্র” টার্মটি যায় না। বরং তা গণতন্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়। ফলে নিবন্ধন করতে সমস্যা হচ্ছিল। নিবন্ধনের মাধ্যমে বৈধভাবে রাজনীতি করতে নামে পরিবর্তন আনা হয়েছে। যার ফলে এখন পর্যন্ত তারা বৈধ‌ দল হিসেবে টিকে আছে ও রাজনীতি করে যাচ্ছে।
সংগঠনের স্বাধীনতা শিরোনামে সংবিধানের ৩৮ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, জন শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংগঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে, কোনও ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংগঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি–[ক] উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। [খ] উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। [গ] উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোনও দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। বা [ঘ] উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।
এই ৩৮ নং ধারার ক. খ. ঘ. এই তিনটি অনুচ্ছেদ ভালোভাবে বুঝলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দ্বীন কায়েমের কথা মুখ দিয়ে কখনোই আসতো না। এবং এসব অলীক স্বপ্নও দেখতো না। ইসলাম সমুন্নত হবে। বিজয়ী হবে। পৃথিবীর প্রতি ইঞ্চি মাটিতে শরীআহ বাস্তবায়িত হবে ইনশাআল্লাহ। তবে তা রবের দেখানো পদ্ধতিতে হবে। নববী মানহাজে হবে। কাফির-মুশরিকদের এঁকে দেওয়া ছকে নয়। আর এটা কখনও সম্ভবও নয়। মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসি ও তার সমর্থকদের ইতিহাস আমাদের সামনে স্পষ্ট। শতকরা ৫১. ৭ % ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিল। তারা ক্ষমতায় এসে দ্বীন কায়েম করেনি, শুধু করার কথা ভেবেছিল ও সামান্য চেষ্টা করেছিল। পরের পরিণতি আমাদের কারও অজানা নয়। বাংলাদেশের কথিত ইসলামপন্থী গণতান্ত্রিকদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। এতে নিজেদের ঈমান ও অস্তিত্ব দুটোই রক্ষা পাবে।
সর্বশেষ কথা—গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কেউ ক্ষমতায় যেতে পারে, এটা সম্ভব। তবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আর যদি কেউ পেশি শক্তি প্রয়োগ করে শরীআহ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে এর অনিবার্য পরিণতি হবে যুদ্ধ এবং গৃহযুদ্ধ। শুরু হবে দমন-পীড়ন। চলবে ক্রাক ডাউন। মাঝখানে ঈমান বিধ্বংসী মতবাদ গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠা করার কারণে দ্বীন হারিয়ে বেইমান হওয়াটা সম্পূর্ণ ফ্রি। এ ক্ষেত্রে আমাদের কথা হলো দ্বীন কায়েমের জন্য গণতন্ত্র নয়; বরং দাওয়াত, ই’দাদ ও জিহাদের পথ অবলম্বন করতে হবে। তাওহীদে ইলমি ও আমলির সমন্বয় সাধন করতে হবে। দাওয়াত, ই’দাদ ও জিহাদ এই তিনটি কাজের মাধ্যমেই দ্বীনের বিজয় আসবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা’আলার দ্বীন তাঁর মানসে মোতাবেকই বাস্তবায়িত হবে। এবং আমাদের সামনে এর নজিরও রয়েছে। আফগানিস্তান এবং আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল ও বর্তমান সিরিয়ার বিজিত অঞ্চলগুলো এর জলন্ত উদাহরণ। আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফীক দিন, আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *